বয়স যখন ২২ ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ ঢাকা, বাংলাদেশ হন্যে হয়ে ছুটছেন সন্ধ্যা । তিনি আছেন মিছিলের মাঝামাঝিতে । কিংশুকের হাতটা শক্ত করে ধরা । সেই ৪৮ থেকে অসংখ্য মিছিলে ছিলেন তারা একসাথে । কে যেন পেছন থেকে ধাক্কা দিল । তিনি দেখলেন কিংশুকের ঘড়িটা তার হাতে কিন্তু মানুষটা হারিয়ে গেল । চিরতরে । অসংখ্য গুম হয়ে যাওয়া মানুষের ভীরে । আজ তাই বইয়ের পাতায় শ্রদ্ধাভরে কেউ হারিয়ে যাওয়া কিংশুকের নাম উচ্চারণ করে না । কিংশুক শুধু রয়ে গেছে সন্ধ্যার The Gift Of The Magi তে । একজনের ছিলো দীঘল চুল আর একজনের বনেদী ঘড়ি । দু’জনে মিলে ছোট্ট , এক রুমের ফ্লাটের স্বপ্ন। সন্ধ্যা ঘড়িটা রেখে দিল যত্ন করে । ফেলে দিল তার দীঘল চুল । যদি ‘ডেলা’ হওয়া নাই হয় তবে কি হবে এই চুল দিয়ে । হল কিন্তু জানেন । বাঙ্গালী মেয়েদের পুরোনো অস্ত্র... চুল ফেলে দিয়ে বিয়ে ঠেকানো । সেই থেকে একাই রয়ে গেলেন । তার আন্দোলন কিন্তু চললো ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত । শুধু মনের ভেতর খুঁতখুত করছিলো একটা জিনিস...ভাষার জন্য এতো বড় আন্দোলনের শুরুটা হয়েছে যে সংগঠন ‘তামুদ্দুন মজলিস’ থেকে , তার জন্য কি কোন বাংলা নাম কেউ খুঁজে পায়নি??
বয়স যখন ৩১ ১৯ মার্চ, ১৯৬১ আসাম, ভারত ট্রেনটা এতো জোরে হুইসেল দিল যে সন্ধ্যা আতকে উঠলো । মার্চ মাসের গরমে ঘামছেন । তার উপর মাথায় চুল না থাকায় সারাক্ষ্ণ একটা স্কার্ফ দিয়ে ডেকে রাখতে হয় । আসামের লোকজন বাংলায় কথা বলতে চায় কিন্তু সরকার মানছেনা । আজকে সবাই স্টেশন ঘেরাও করে মিছিল , মিটিং করছে । আচমকা শুরু হলো পুলিশি হামলা । প্রতিটি ভাষার মিছিলে সন্ধ্যা প্রিয়জন হারায় । ১১ জন শহীদের মধ্যে কমলা ছিলো আসামের তার একমাত্র কাছের বন্ধু । সন্ধ্যা ‘রায়’দের যখন পাকিস্তান সরকার বাধ্য করলো দেশ ছাড়তে, রায় বাড়ির লোকজন চলে গেল তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটায় , আসামে । সালটা ছিলো ১৯৫৮। যাওয়ার সময় সন্ধ্যা নিয়ে গেছে একমুঠো মাটি , কিংশুকের ঘড়ি আর ফেলে আসা সময় ।
বয়স যখন ৮২ স্থান বা সময় গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল কোন ভাষায় তিনি তার স্বপ্নের কথা ভাবছেন।
কাপড় বের করতে আলমারি খুলতেই নজর গেল জরায়ুটার দিকে । মনটা খারাপ হয়ে গেল । অসংখ্য নতুন জীবন দেয়ার ক্ষমতা থাকলেও এটি আজ বোতলে , ফরমালিনে ডোবানো । মাস খানেক আগে শরীর থেকে বাদ দেয়া হয়েছে । কারও বোঝা হতে চাননি, তাই নিজ বাড়ি ছেড়ে আজ তিনি ওল্ডহোমে । আজকাল চোখে ভাল দেখেননা । কনক বলছিলো আজকাল নাকি রাতে নাক ও ডাকছেন । খুব ইচ্ছে করছিল একবার বাংলাদেশে যেতে । ভেবেছিলেন , বাসে বা ট্রেনে যাবেন কিন্তু সীমান্তের অবস্তা নাকি ভালো না । তাই আকাশ পথেই যেতে হচ্ছে । রওনা দেবেন ২০ ফেব্রুয়ারি । ২১ তারিখ শহীদ মিনারে যাবেন । আজকাল মাঝে মাঝে তিনি বুঝতে পারেন না কোনটা তার দেশ । কোনটাই হয়তোবা তার দেশ নয় বা দুটোয়...কিন্তু মা যেমন একটা ,ভাষাও তার একটাই। আর কেউ জানুক বা না জানুক তিনি কিন্তু ঠিকই জানেন এই ভাষায় স্বপ্ন দেখার অধিকারের জন্য তাকে কত কিছু হারাতে হয়েছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রজ্ঞা মৌসুমী
আসামের ১১ জন শহীদের কথা জানা ছিলনা আমার। সেই ইতিহাসটা জেনে ভালো লাগছে। ইতিহাসের দুটো ঘটনা ঘিরে সুন্দর প্লট দাঁড় করিয়েছেন। ফেব্রুয়ারীর ভাষা আর ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া পেলাম। জরায়ু বাদ দেয়াটা একটা মিনিংফুল হিন্টস মনে হচ্ছে। আপনার লেখার ভিন্নতার স্বাদ মুগ্ধ করে। আমার ভালো লেগেছে। কেন যেন সন্ধ্যার দৃষ্টিভঙ্গীটা সেই সময়ের হলোনা পুরোটা। এই সময়ের লেখিকার হলো কিছুটা। হয়তো 'তামজুদ্দুন মজলিস' নিয়ে খুঁতখুত করা দেখে। কারণ সে সময় এসব শব্দের ব্যবহার খুব স্বাভাবিক, প্রশ্ন জাগানোর মত ছিলনা। ৪৭/৪৮-এর দিকে মানুষের বড় পরিচয় ছিল ধর্ম। মুসলমানের পরিচয় সবখানে প্রকট- দেশ আলাদা থেকে শুরু করে পোশাক, শিক্ষা, মানুষ কিংবা সংঘঠনের নাম। যেটা নিয়ে খুতখুঁত করার কথা, সেটা হলো 'বাংলাদেশ' নাম। তাদের কাছে বাংলাদেশ মানে পূর্ব এবং পশ্চিমবাংলা দুটোই। হয়তো 'ইচ্ছে করছিল বাংলাদেশে যেতে' না হয়ে সন্ধ্যা ভাবত 'পূর্ববাংলায় বা ওপারে যেতে ইচ্ছে করছে।" যাই হউক, এটা আমার নিজস্ব ভাবনা। লেখা থামাবেন কেন ভাই? নিয়মিত লিখতে থাকুন...শুভ কামনা।
'তামজুদ্দুন মজলিস' নিয়ে খুঁতখুত টা কিন্তু সন্ধ্যা করছিল " ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি " তে । ৪৮/৪৯ এ নয়। ধর্মের কারনে যখন তাকে বাংলাদেশ (পূর্ব বাংলা) ছাড়তে হয়েছিলো। "খুব ইচ্ছে করছিল একবার বাংলাদেশে যেতে ।" তার বয়স ছিল তখন ৮২ বছর।গল্পে আছে
"স্থান বা সময় গুরুত্বপূর্ণ নয়।
গুরুত্বপূর্ণ হল কোন ভাষায় তিনি তার স্বপ্নের কথা ভাবছেন।" কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
গল্প কবিতায় আপনি যতবার সেরা হয়েছেন আর কেউ বোধহয় হয়নি...সেরাদের সেরা কোন কিছু থাকলে তা আপনার হতো...অনেক শুভকামনা।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
শুধু মনের ভেতর খুঁতখুত করছিলো একটা জিনিস...ভাষার জন্য এতো বড় আন্দোলনের শুরুটা হয়েছে যে সংগঠন ‘তামুদ্দুন মজলিস’ থেকে , তার জন্য কি কোন বাংলা নাম কেউ খুঁজে পায়নি?? // khub valo laglo mili apner lekha.....sundor tinti odhyae golpoer sesh.......suvo kamona ..roilo.....
জুয়েল দেব
প্রচলিত গল্পের ফরম্যাট থেকে একেবারে ভিন্ন রকম। আপনার উন্নতি লক্ষণীয়। আরেকটা কথা, ইদানীং বিশ্বায়নের প্রভাবে আমাদের সেই পুরোনো ২১ তারিখ কে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে, ওইদিন এবং প্রতিদিন রেডিওগুলো ভাষাটাকে মোটামুটি ন্যাংটো করে ছাড়ছে।
সাইফুল করীম
তিন টাইম ফ্রেমের মধ্যে যে গল্প বললেন- বিশেষণ আর ছাপোষা কমন স্তুতি করলে তার অমর্যাদা হয়ে যাবে। তাই প্রিয়তে তুলে নিলাম আর সামনে আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।